Breaking Bharat: খিদের জ্বালা বড় জ্বালা! কেউ বা পেল প্রচুর ,আবার কেউ খেলো না মোটেই ! (hunger pangs) কারোর প্রচুর জোটে আর কেউ মাটিতে পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকেন! আজব পৃথিবী, অদ্ভুত সমাজ
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি- কবি এ কথা এমনি এমনি বলেননি। খিদের জ্বালা যন্ত্রনাকে উপলব্ধি করেছিলেন তিনি। থরে থরে খাবার সাজানো নামিদামি রেস্টুরেন্টে অথচ তার বাইরে বসে থাকা ভিখিরি হাত পাতছে এক টাকা দু টাকার জন্য।
অন্তত বিস্কুট কিনে যাতে খেতে পারে, হাজার হোক পেটের জ্বালা ,তাকে যে না নিবারণ করে উপায় নেই। অথচ অপচয়ের পরিমাণ দেখলে চোখ কপালে ওঠে সমাজতাত্ত্বিকদের। প্রশ্ন করা যায়, কেউ বা পেল প্রচুর ,কেউ খেলে না মোটেই
ভাবছি নতুন শতাব্দীর কপালে ঠিক কী জোটে?
এই যে জীবনের বেঁচে থাকা তার প্রধান তিনটি শর্তের প্রথম টাই কিন্তু অন্ন অর্থাৎ খাওয়া দাওয়া। খাওয়ার জন্য বাঁচা মানুষের অভাব নেই পৃথিবীতে কিন্তু বাঁচার জন্য খেতে হয় যাদের তাদের কপাল বড়ই মন্দ। এদের দিকে বোধহয় তাকিয়ে দেখেন না স্বয়ং বিধাতাও।
তা না হলে ক্ষুধার্ত শিশু আর ক্ষুধার্ত রাস্তার কুকুর ডাস্টবিনে খাবার খুঁজতে পারে? এক টুকরো খাবার পেলে দুজনের মধ্যে চরম ধস্তাধস্তি! নিরীহ ঘটনার নিশংস দৃশ্য চোখের জল আনে নেটিজেনদের। খাবার শব্দটা কারোর কাছে বিলাসিতা কারোর কাছে প্রয়োজন।
দু মুঠো অন্নের জন্য একজন মানুষ ঠিক কতটা কষ্ট করতে পারেন সেই নিয়ে যদি প্রতিবেদন লিখতে হয় তাহলে তা যেন উপন্যাস হয়ে দাঁড়াবে। এসি ঘরে বসে সোফা সেটের সামনে টেলিভিশন স্ক্রিনে দেশের দারিদ্রতার খবর দেখা মানুষেরা কি জানেন, ঠিক সেই মুহূর্তে অন্ধকার পৃথিবীতে কত মেয়ে নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছে দু মুঠো খাবারের আশায় পরিবারের মুখে অন্য তুলে দেওয়ার প্রয়োজনে?
হাই প্রোফাইল চাকরি করা মানুষটা বাড়ির অনুষ্ঠানে অনলাইনে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসে । সে কি জানে যে ছেলেটি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে সে নিজে খেয়েছে কিনা? তার দায়িত্ব অন্যের মুখের সামনে খাবার পৌঁছে দেওয়া । তাই পেটে গামছা বেঁধে রোদ জল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছুটে চলেছে সে।
রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে প্রচুর অর্ডার দেয় বড়লোক মানুষেরা অর্থাৎ দুর্মূল্যের বাজারেও যাদের পকেটে এবং মানিব্যাগে প্রচুর টাকা। কিন্তু খেতে পারেন না অগত্যা সেই খাবার যায় ডাস্টবিনে। তবু মনে করেন না যে খাবারটা খেতে পেলাম না সেটা প্যাক করে নিয়ে গিয়ে, রাস্তায় বসে থাকা কোনও না খেতে পাওয়া মানুষের হাতে তুলে দিই।
যদি কখনো এরকম হয়, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন খাবার নেই শুধুমাত্র জল খেয়ে কাটাতে হবে। তাহলে হয়তো যন্ত্রণার আভাস কিছুটা হলেও পাবেন। জীবন মানে লড়াই করা যুদ্ধটা সবাইকে করতে হয়। কিন্তু কিছু যুদ্ধ সত্যিই ভয়ংকর রকমের কঠিন।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, এমন অনেক মানুষের দেখা মেলে যারা খুব ভালোভাবে নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে চান। এই কাজটা করার সময় তারা কিন্তু অনেক সময় নিজেদের শিকড় বা ফেলে আসা দিনটা ভুলে যান, সেটা তাদের সমস্যা ।
কিন্তু যদি নিজেদের গুছিয়ে নেবার তাগিদে অন্যকে খারাপ রাখা বা আঘাত করা বা যন্ত্রণা দেবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে সেটা অবশ্যই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মত বিষয়। দিবারাত্র অষ্টপ্রহর পরিশ্রম করে মাসের শেষে কটা টাকা হাতে পেয়ে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেখুন।
আরো পড়ুন- CMC Vellore : অনেকেই চিকিৎসা করাতে ভেলোরে যান! চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভেলোর যেতে হয় কেন?
আর সেখানে খাওয়া দাবার খরচ বাবদ যে মূল্যটা দিতে হয় , খাওয়ার শেষে যখন রাশি রাশি ভাত ডাল বিরিয়ানি চিকেন তরকারি বা অন্য সামগ্রী আস্তাকুঁড়ে চলে যায়- তখন একবার ডায়েরির খাতায় দাঁড়িপাল্লা আঁকার চেষ্টা করুন। এই যন্ত্রণাটা বুকে গিয়ে লাগবে, যে যন্ত্রনা প্রতিদিন না খেতে পাওয়া মানুষগুলোর পেটের মধ্যে হয়।
কেমন লাগে যখন আপনি কোন কারনে খেতে পারছেন না ,ধরে নিচ্ছি ব্যস্ততার কারণে, কিন্তু খিদের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন? কখনো ভেবে দেখেছেন এই অনুভূতির মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন কত লক্ষ কোটি মানুষ লড়াই করে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন- Nupur foot jewelry : পায়ে নুপুর পরা হয় কেন? এমনকি নুপুর পরলে পিঠের ব্যথা নাকি কমে যায়?
যে শিশু খিদের জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে আর মা বাবা অগোচরে চোখের জল ফেলেছে সেই পরিবারকে চেনেন? দিনের পর দিন ঢক ঢক করে জল খেয়ে পেট ভরানো, কারণ খাবার নেই ।অথচ পৃথিবীর অন্য প্রান্তে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে খাবারের অপচয় দেখলে বড় কষ্ট হয়।
যে পরিমাণ কষ্ট হয় তার বিন্দুমাত্র মূল্য কি আমরা দিই?
এত গেল খাবার না খেতে পাবার কথা কিন্তু খাবার আপনার মুখের সামনে যারা এনে দেন তাদের কথা ভেবে দেখেছেন কখনো? গরমের মধ্যে আগুনের তাপে রান্না করার পর আপনি যদি সেই খাবার ফেলে দেন তাহলে তার কেমন লাগে?
আরো পড়ুন- Women : নারীর রূপ যত বেশি সে তত বেশি অহংকারী! এটা কি শুধু নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ?
আপনি যে খাবার খাচ্ছেন বা আমরা যে খাবার হাতের কাছে পাচ্ছি তাকে তৈরি করার জন্য যে পরিমাণ কষ্ট হয় তার বিন্দুমাত্র মূল্য কি আমরা দিই? এই প্রশ্নগুলো কেউ করে না? খেতে না পাওয়া চোখগুলো যখন রাতের গভীরে স্বপ্নের মধ্যে জ্বলজ্বল করে ওঠে, যেন আর্ত চিৎকারে বলতে চায় একটু খাবার চাই খাবার দাও।
আরো পড়ুন- নেতা মন্ত্রী অসুস্থ হলেই SSKM-র উডবার্ন ওয়ার্ড! জানেন এই উডবার্ন ওয়ার্ডের অজানা কাহিনী
বুকের ভেতরটা তখন হু হু করে ওঠে। মনে হয় আমরা কি পারিনা একটা ভালো পৃথিবী তৈরি করতে যেখানে খিদের যন্ত্রণা থাকবে না? যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সেই মত প্রতি একজন মানুষের খাবার দায়িত্ব যদি নিতে পারি তাহলে কি এই পৃথিবীকে খিদের জ্বালা (hunger pangs) থেকে মুক্ত করতে পারা সম্ভব নয়।?
আবারো বলতে হচ্ছে এই প্রশ্নগুলো কেউ ভাবে না। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার একটা লাইন বড্ড মনে পড়ছে, “মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও”