Breaking Bharat: নারীর রূপ যত বেশি সে তত বেশি অহংকারী! এটা কি শুধু নারীর (Women) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ? সুন্দর আর অহংকার এই দুয়ের মধ্যে কেমন সম্পর্ক বলুন তো? একটা থাকলে আরেকটা কি থাকতেই হবে? দম্ভে আধিপত্য কার বেশি, কেউ জানেন?
কথায় বলে,” সুন্দরী গো দোহাই তোমায় মান কোরো না”। যেন মান অভিমান আর সৌন্দর্য এই দুটোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারী। আরো একটা বিশেষণ কিন্তু নারীর সৌন্দর্যের সঙ্গে জুড়ে গেছে ওতপ্রোতভাবে। সেটা হল অহংকার। শাস্ত্র পুরাণে লেখা আছে অহংকার পতনের মূল।
কিন্তু সৌন্দর্যের কথা বললেই নারীর অহংকার নিয়ে আলোচনা হতে শুরু করে। চলতি বাংলায় একটা প্রবাদ আছে রূপের দেমাক! অর্থাৎ যে নারীর রূপ যত বেশি সে তত বেশি অহংকারী। কিন্তু ভেবে বলুন তো এই কথাটা শুধু কি নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ? পুরুষ কেন ব্যতিক্রম হতে যাবেন? পুরুষের রূপ থাকতে নেই নাকি অহংকার?
“যে শিশু জন্ম নিল আজ রাতে তার মুখে খবর পেলুম সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক” – এই কথা আমাদের নয় লিখে গেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)। শিশু জন্ম নেওয়ার পর তার নারীত্ব বা পুরুষত্ব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয় না ঠিকই, কিন্তু মেয়ে না ছেলে এটা জানার আগ্রহ প্রমাণ করে দেয়, সমাজ আজও ঠিক কী চোখে মানব সন্তানকে দেখে?
মেয়েরাও তো মানুষ নাকি?
তারপর যত সময় যায় বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের দিকে যখন তখন আঙুল তোলা যায়। মেয়েদের পরিচয় তার গায়ের রং , তার মুখশ্রী, চুল, নাক , চোখ এমনকি দৈহিক গড়ন- এসব দিয়েই হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে।
যে কোনো বিষয়ে সব সময় মেয়েদের দিকে প্রশ্ন তোলা হয়। কেউ পুরুষদের নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। কিন্তু মেয়েদের ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে , যে মেয়েরাও তো মানুষ নাকি? তাহলে তাঁদের নিয়ে এতো কৌতূহল কেন সমাজের? আজও মেয়েদের বিচার তার গায়ের রং দিয়ে হয়। ফর্সা না কালো ? লম্বা না বেঁটে?
এই দিয়ে সমাজ নারীকে মাপার চেষ্টা করে। সবসময় যে পুরুষ এই কাজটা করে তা নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। যে মেয়েটা একটু ফর্সা বা গায়ের রং পরিষ্কার তাকে সুন্দরী বলে ভেবে নেওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে সমাজের। এই মেয়েটা যদি সবার সঙ্গে মেলামেশা করে তাহলে সে বাচাল, যদি নিজেকে গুটিয়ে রাখে তাহলে অহংকারী।
তখন তাকে শুনতে হয় ‘রূপের দেমাক’ – এর মত শব্দ ভান্ডার। আপনি কি জানেন, সুন্দরী মেয়েদের অনেকেই কিন্তু ভীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। সুন্দরী হওয়ার জ্বালা কম না। হয়ত আপনার তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ, অহংকারী।
খোঁজ নিয়ে দেখুন সুন্দরীটি হয়ত নিঃসঙ্গ, ভীত একাকিনী। রাস্তায় বের হতেও অনেক সময় ভয় পায়। বা বাড়িতে অতিরিক্ত শাসনে থাকতে হয় কারণ সে সুন্দরী তাই কোথাও তাঁর একা যাওয়ার অনুমতি নেই। যেখানেই যাবে বাবা, কাকা বা দাদা স্থানীয় কেউ সঙ্গী হবেন। অর্থাৎ স্বাধীনতা বলে কিছুই নেই।
বন্ধুদের সাথে রাতে আড্ডা দিতে সাহস পান না। যদি কিছু অনর্থ ঘটে। রাত করে বাড়ি ফিরতে পারেন না, পাড়ার লোক বদনাম দিতে পারে। এই সব বাধা নিষেধের বেড়াজালে জড়িয়ে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলেন বহু সুন্দরী। গুটিয়ে পাকিয়ে থাকতে থাকতে পরনির্ভরশীলতা জন্মায়। আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়।
আরো পড়ুন- CMC Vellore : অনেকেই চিকিৎসা করাতে ভেলোরে যান! চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভেলোর যেতে হয় কেন?
বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের সামান্যতম ক্ষমতাও নষ্ট হতে থাকে। আজকের দ্বাবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও এমন বহু সুন্দরী আছেন যাঁদের বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরনোর সুযোগ হয় না। অভিভাবকেরা ভয়ে ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উৎপাতের জ্বালায় জ্বলে তড়িঘড়ি অপ্রাপ্তবয়স্ক বা সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক সুন্দরীদের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হন।
আরো পড়ুন- Nupur foot jewelry : পায়ে নুপুর পরা হয় কেন? এমনকি নুপুর পরলে পিঠের ব্যথা নাকি কমে যায়?
তারপর কতটা নিশ্চিন্ত হন বা আদৌ হন কিনা তা অন্য বিতর্কের বিষয়। কিন্তু সুন্দরী তো ? অহংকারী? অতএব নিজের সব শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সংসারী হন। সেখানে যদি কপাল গুনে ভালো পরিবার জোটে তো ভালো। নাহলে দুর্ভোগ সেখানেও কম নয়। সেই সুন্দরী ও অহংকারীর তকমা পিছু তাড়া করে।
এইসব কথা বলে বলে সৌন্দর্যকে সম্মান নয় প্রশংসা করার মোড়কে কী ভাবে যে মেয়েটির আর সমাজের ক্ষতি করছেন, সেটা বোধহয় সমাজের তথাকথিত সামাজিক মানুষেরা বুঝতেও পারেন না।
আরো পড়ুন- নেতা মন্ত্রী অসুস্থ হলেই SSKM-র উডবার্ন ওয়ার্ড! জানেন এই উডবার্ন ওয়ার্ডের অজানা কাহিনী
একজন মানুষের পরিচয় হয় তার অন্তরকে দেখে বাইরের রূপে নয়। সুন্দর এই পৃথিবীতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা হল পবিত্রতা, শিশুর হাসি, সারল্য আর সত্যতা। কথায় আছে সত্যম শিবম সুন্দরম। অথচ পুরুষ জাতির দিকে সৌন্দর্যের অহংকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলে না।
সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলের অহংকার নেই একথা নিশ্চিত করে বলা যায়? কিন্তু ঘুরে ফিরে প্রশ্ন করে বিপাকে ফেলবো আপনাকে, যদি বলি আপনার উত্তর হবে, ‘সোনার আংটি আবার বাঁকা ‘, কি তাই না?