Breaking Bharat: কালনাগিনীর ছোবল! লখিন্দরের মৃত্যুর কারণ যে সাপ, সে আসলে নিরীহ? সাপের সিনেমা দেখেন? ভয় লাগে? কালনাগিনী (Kalnagini) নামটা শুনলে কিন্তু সাপের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার নামটাও মাথায় আসে। বহু বছর ধরেই সাপ আর সিনেমার অদ্ভুত যোগ।
ভক্তি হোক বা ভয়, দর্শক কালনাগিনী, নাগ নাগিনী নাম শুনলেই কেমন একটা টানটান উত্তেজনা বোধ করেন তাই না? আসলে শ্রাবণের ভরা বর্ষায় সরীসৃপদের পোয়া বারো। এদিক ওদিক থেকেই যখন তখন উঁকি দেন তারা। সাবধান! নিজের আশপাশটা একবার দেখে নিন।
কালনাগিনী নাম শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয়? (Kalnagini ):
আসলে নিঃশব্দে এসে হঠাৎ ফণা তুললেই, ব্যাস, এক ছোবলে ছবি! মা মনসার কন্যাদের নিয়ে আজ কথা বললে মনসামঙ্গল ছাড়া গতি নেই। আজ মঙ্গলকাব্যের সেই ভীষণ চেনা কালনাগিনীর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর চ্যালেঞ্জ। আরে না না ভয় পাচ্ছেন কেন? পড়তে পড়তে যদি মনে পড়ে তাই আগে থেকেই বলে রাখা।
আসলে ছোটো শিশু যখন বড় হয়, তখন নানা রকমের গল্প কথা শুনিয়ে তাঁকে কখনও ভয় দেখানো বা কখনও সংস্কৃতি লোকাচারের বিষয়ে সমৃদ্ধ করার রীতি বাংলায় নতুন নয়। সেখান থেকেই বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনি প্রায় সর্বজনবিদিত (story of Behula Lakhinder)।
কালনাগিনী নিয়ে সত্য জানুন (Kalnagini):
সাপ অধ্যুষিত এই বাংলায় অতি প্রাচীন কাল থেকেই সাপের প্রতি ভয়ভীতি, সাপেদের একজন দেবী আছে – এরকমটা কল্পনা করতে শিখিয়েছিল এবং তাকে তুষ্ট করার জন্য রচিত হয়েছিল একের পর এক ব্রতকথা, পাঁচালি, কাব্য, ভাসান যাত্রা, ঝাঁপান গানের মতো লোকাচার ও সংস্কৃতি।
এই প্রাচীন সংস্কৃতির যে অবশেষটুকু আজকে গ্রামজীবনে লেগে আছে, তার মূল উৎস হল মনসামঙ্গল কাব্য (Manasamangal Kavya)। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবি মনসামঙ্গল রচনা করেছেন, তার মূল কাহিনিটা মোটামুটি একই। তবে একটা বিষয় একটু পরিষ্কার করে রাখা দরকার।
লখিন্দরের মৃত্যু হয়েছিল কালনাগিনীর কামড়ে?
কালনাগিনী কোনও কাল্পনিক সাপ নয় এবং মনসামঙ্গলে এর চেহারার যে বর্ণনা দেওয়া আছে, বাস্তবের সাথে তার বিশেষ অমিলও নেই। সুতোর মতো ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে ঢুকতে না পারলেও শরীরকে চ্যাপটা করে বাতাসে দু-আড়াই মিটার ‘গ্লাইড’ করতে পারে। এর বিষথলি আছে, বিষদাঁত আছে। খুবই শান্ত প্রকৃতির হওয়াতে সাধারণত কামড়াতে চায় না। এতটুকু শুনে যারা ভাবছেন স্বস্তি মিলল, পরের পর্ব তাদের জন্য।
মঙ্গল কাব্য অনুসারে লখিন্দরের মৃত্যু হয়েছিল কালনাগিনীর কামড়ে (Lakhinder died from the bite of Kalnagini), তারপর লখিন্দরের দেহে প্রাণ ফেরাতে বেহুলার কতই না সংগ্রামের ইতিহাস লেখা রয়েছে ছত্রে ছত্রে। বেহুলার জীবনের সমস্ত উত্থান-পতনের পিছনে রয়েছে কালনাগিনী। তাই শুরু থেকেই কালনাগিনী হয়ে গেছে মোগাম্বর মতো ভিলেন।
কালনাগিনী সাপের কি বিষ থাকে? (Kalnagini Snake):
কিন্তু জানলে আশ্চর্য হবেন, বাস্তবে এই সাপের ছোবল পিঁপড়ের কামড়ের সমান। এই সাপের কামড় খেয়েও মারাত্মক ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ কোনও কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে অচিরেই বিরাট কোনও ক্ষতি ডেকে আনবেন না।
এই সাপটি অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির, যদি খুব ভয় পেয়ে যায় তাহলে দ্রুত পালিয়ে যায়। আর যদি খুব বিরক্ত হয় তবেই কামড়ায়। সাধারণত বিষাক্ত অন্যতম সাপ যেমন গোখরো, কেউটে, কালাচ এদের দাঁত চোয়ালের সামনের দিকে থাকে। কিন্তু কালনাগিনী সাপের দাঁত দুটো চোয়ালের একদম পিছন দিকে থাকে।
এই ধরনের সাপদের বলা হয় পশ্চাৎ বিষদন্তী সাপ। এই সাপের তালিকায় রয়েছে আমাদের চেনা লাউডগা, মেটুলি, নোনাবোড়া প্রভৃতি সাপ। সাধারণত এই সাপের কামড়ে (snake bite) মানুষ মারা যায় না। খাবার সংগ্রহের সময় মাঝে মাঝে এই সাপটি গাছের উঁচু ডাল থেকে নিচু ডালে লাফ দিয়ে চলাফেরা করে।
তাই একে উড়ন্ত সাপ বলা হয়। বাস্তবে এর উড়তে পারে না। ছোট জাতের গিরগিটি, ইঁদুর, বাদুড়, বিভিন্ন পাখির ডিম, কীটপতঙ্গ প্রভৃতি কালনাগিনীর খাদ্য। এদের শিকারে অত্যন্ত ধৈর্য থাকে। আকারে প্রায় ২ থেকে ৪.৫ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ এবং এদের দেহ ওজনে খুব হালকা হয়।
আরো পড়ুন- Darjeeling : পাহাড়ের রানি মানেই একটাই নাম দার্জিলিং ! কেমন আছে শৈল শহর?
কালনাগিনী ভিলেন ?
এবার শিকার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা যাক। শিকার ধরার সময় প্রথমে শিকারের ঘাড়ে কামড় দিয়ে তাকে নিস্তেজ করে দেয় এবং তা ভক্ষণ করে। এখন প্রশ্ন এতই যদি নিরীহ হবে তাহলে কালনাগিনী ভিলেন কী করে হতে গেল কাব্যে? আসলে পুরোটাই লোককথা, জনশ্রুতি।
আরো পড়ুন- Love Relation: প্রেমে পড়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছেন? এবার!
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা জানলে অক্সিজেনের অভাব আর কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্য বেশি থাকায় লখিন্দরের মৃত্যু বলে জানা যায়। বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর ছিল লোহা দিয়ে তৈরি। সেখানে শুধুমাত্র সূচের মতো একটুখানি ছিদ্র ছিল। ঘরের মধ্যে জ্বলছিল প্রদীপ। শুধুমাত্র সূচের মতো ছিদ্র দিয়ে কালনাগিনী প্রবেশ করবে কিভাবে ? যদিও এই কথাগুলি সবই অনুমান ভিত্তিক।
মতামত ভিন্ন থাকতে পারে, সবার চিন্তা মতামত গবেষণাকে সম্মান দেয় Breaking Bharat ।