Breaking Bharat: জয় গোবিন্দ জয় রাধে! যাবেন নাকি বৃন্দাবন ধামে (Vrindavan Dham)? আজ চলুন ইতিহাসের অজানা পাতায় চোখ মেলে দেখি, হিন্দু ধর্মের মানুষের মননে,কৃষ্ণ নাম হরি নাম চিরন্তন! শ্রী কৃষ্ণ ভগবান হয়ে মানব অবতারে ধরাধামে এসে লীলাগীতি প্রচার করেছেন। মথুরা, গোকুল আর বৃন্দাবনে নারায়ণের অবতার রূপের অস্তিত্ব। আজ সেই পূণ্য তীর্থ বৃন্দাবন ধাম নিয়ে কথা।
কথায় আছে ভক্তের ভগবান, তাই তো
” কৃষ্ণ নাম হরি নাম বড়ই মধুর
যে জন কৃষ্ণ ভজে সে বড় চতুর “
পূণ্য তীর্থ বৃন্দাবন ধামের ইতিহাস: (Vrindavan Dham)
কৃষ্ণ প্রেমে পাগলপারা বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই কিশোরী স্বয়ং। বৃন্দাবন হল ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মথুরা জেলার অন্তর্গত একটি শহর। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে নিজের ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন। সংস্কৃত বৃন্দাবন শব্দটি এসেছে বৃন্দা অর্থাৎ ‘তুলসী’ ও বন অর্থাৎ ‘অরণ্য’ শব্দ দুটি থেকে। বৃন্দাবনের নিধিবন ও সেবাকুঞ্জে এখনও দুটি তুলসী বন বিদ্যমান।
ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (Sri Chaitanya Mahaprabhu) বর্তমান বৃন্দাবন আবিষ্কারের আগে মানুষ ভুলে গিয়েছিল বৃন্দাবনের আদি অবস্থান কোথায়! ১৫১৫ সালে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার স্থানগুলি নির্ধারণের লক্ষ্যে শ্রীচৈতন্য বৃন্দাবনে আগমণ করেন (Sri Chaitanya arrived in Vrindavan)। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, তিনি তাঁর দৈব ও আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে বৃন্দাবন ও তৎসংলগ্ন যে সব স্থানে কৃষ্ণ বাল্যলীলা করেছিলেন, সেগুলি আবিষ্কার করেন।
সনাতন ধর্মের বৈষ্ণবীয় ধারার অনুসারীদের কাছে বৃন্দাবন অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান। সারা বিশ্বের অসংখ্য কৃষ্ণ ভক্ত প্রতি বছর বৃন্দাবন ধাম দর্শনে আসেন এবং বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার প্রায় পুরোটা সময়ই বৃন্দাবনে কাটিয়েছেন। এখানেই কৃষ্ণ ও তাঁর দাদা বলরাম অন্যান্য রাখাল বালকদের সাথে ছেলেবেলার খুনসুঁটি করে দিনাতিপাত করেন।
বৃন্দাবন শহরে রয়েছে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির:
বৃন্দাবন শহরে রাধা ও কৃষ্ণের অনেকগুলি মন্দির আছে (temples of Radha and Krishna)। হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে বৃন্দাবন একটি পবিত্র তীর্থস্থান। সমগ্র বৃন্দাবন জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। ভক্তদের পদ চারণায় এই মন্দিরগুলো প্রতিদিন মুখরিত থাকে। দেখে নেয়া যাক বৃন্দাবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্দিরের বর্ণনা।
প্রথমেই বলি, মদনমোহন মন্দিরের কথা। বৃন্দাবনের প্রাচীন মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম। জনশ্রুতি আছে যে, মুলতানের রাজা কাপুর রাম দাস কালীয় দমন ঘাটের কাছে মদনমোহন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনের সাথে এই মন্দির ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এই মন্দিরের আদি মদনগোপাল বিগ্রহটি নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজস্থানের কারাউলিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বর্তমানে মদনমোহন মন্দিরে আদি বিগ্রহের একটি প্রতিমূর্তি পূজিত হয়।
মীরাবাঈ মন্দির : (Mirabai Temple in Vrindavan)
কৃষ্ণ প্রেম মানেই মীরার কথা। মীরাবাঈ মন্দির রয়েছে বৃন্দাবন। মীরাবাঈ ছিলেন একজন রাজপুত রাজকুমারী। তিনি অধুনা ভারতের রাজস্থান রাজ্যের নাগৌর জেলার অন্তঃপাতী মেরতার নিকটবর্তী কুদকি (কুরকি) নামে একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবে মীরাবাঈ এক সন্ন্যাসী দ্বারা পূজিত একটি কৃষ্ণমূর্তিত প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন।
মূর্তিটি নিজের করে নেয়ার জন্য তিনি প্রবল কান্না শুরু করেন। অবশেষে তাঁকে মূর্তিটি দেয়া হয়েছিল। মীরাবাঈ তাঁর রাজ্য ও সংসার ত্যাগ করে জীবনের শেষ ১৪ বছর বৃন্দাবনে কাটান। যে মন্দিরে তিনি ছিলেন সেটি এখন মীরাবাঈ মন্দির নামে পরিচিত।
আরো পড়ুন- Rats : দুই নারীর মিলনেই ভূমিষ্ঠ হল সন্তান? কী ভাবছেন পুরুষ? তাহলে কি চিন্তায় পড়লেন?
হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে বৃন্দাবন নামটি অতি প্রাচীনকাল থেকে জড়িয়ে রয়েছে। সনাতন ধর্মানুসারীদের নিকট বৃন্দাবন অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান (vrindavan dham yatra)। বৃন্দাবনের প্রাচীন মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি হলো গোবিন্দদেব মন্দির। ১৫৯০ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই শতকেরই শুরুর দিকে বৃন্দাবন একটি শহর হিসেবে গড়ে ওঠে।
আরো পড়ুন- Taj Mahal in Agra : আগ্রার তাজমহলের গোপন রহস্য! কলঙ্ক নাকি আলোর উত্থান ?
২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনা অনুসারে, বৃন্দাবনের জনসংখ্যা ৫৬,৬১৮। জনসংখ্যা্র ৫৬% পুরুষ ও ৪৪% নারী। বৃন্দাবনের সাক্ষরতার গড় হার ৬৫%, যা ভারতের জাতীয় গড় হার ৭৪.০৪%-এর কম। বৃন্দাবনের জনসংখ্যার ১৩%-এর বয়স ৬ বছরের নিচে।
আরো পড়ুন- Snake Dream : সাপের স্বপ্ন দেখলে বংশ বৃদ্ধি এমনকি কোটিপতিও হতে পারেন আপনি, জানেন?
বৃন্দাবনে একাধিক মন্দির আজও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। বাঁকেবিহারী মন্দির,রাধাবল্লভ মন্দির, জয়পুর মন্দির, রাধারমণ মন্দির। এই সবের সাথে জড়িয়ে আছে ইতিহাস আর জনশ্রুতি।