Mithun Chakraborty : ডান্সের মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তীর সফলতার গল্প জানেন? বোম্বে কাঁপিয়ে ভারত নাচিয়ে বাংলার ছেলে ডিস্কো করলে,বিশ্ব কি না কেঁপে পারে? (Success story of Mithun Chakraborty)
আজকে ডান্স এর মহাগুরু কে নিয়ে কথা। বাংলা, বাঙালি, ভারতের অন্যতম গর্ব গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। অনস্ক্রিনে তিনি গুন্ডা ফাটাকেষ্ট আবার অফ স্ক্রিনে সমাজ দরদী মিঠুন দাদা। বাঙলাদেশের ছেলেটা আজ বাংলা কাঁপিয়ে ভারতকেও নাচিয়ে দিতে পেরেছেন। বাঙালিকে অলস, ঘরকুনো তকমা থেকে বের করে এনে দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন তিনিই।
মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty ) :
মিঠুন চক্রবর্তী মানেই একটা ইউনিক স্টাইল। হাঁটা চলা, কথা বলা, ডান্স স্টেপ- সবেতেই স্পেশাল টাচ। মিঠুন চক্রবর্তী ১৬ই জুন ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহন করেন বাংলাদেশের বরিশালে। তিনি অরিয়েন্টাল সেমিনারীতে তাঁর স্কুলজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন।
স্নাতকোত্তর জীবনে তিনি অভিনয় জগতে প্রবেশের জন্য পুনেতে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে যোগ দেন ও সেখান থেকে স্নাতক হন। ঠিক এরপরই তাঁর জীবন কিছু অন্যরকমের বাঁক নেয়। ব্রাহ্মণ পরিবারে বড় হয়ে ওঠা ছেলেটা নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে যায়। এরজন্য তাঁকে কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। জীবনে চরম আঘাত পেয়েছিলেন।
একটি দুর্ঘটনায় তাঁর একমাত্র ভাই মারা যায় এরপর থেকেই তিনি নকশাল আন্দোলন থেকে সরে আসেন। আর অভিনয় জগতে মনোনিবেশ করেন। মিঠুন চক্রবর্তী সফলতার আরেক নাম। একাধিক নারী চরিত্র তাঁর জীবনে এসেছেন (Mithun Chakraborty is an Indian actor)।
বেশ কিছু সূত্র দাবী করে যে, একটা সময় মিঠুনের সাথে দক্ষিন ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীর বেশ গভীর সম্পর্ক ছিল। এমনকি তারা গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তবে তাদের এই প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। এবং মিঠুন পুনরায় তাঁর স্ত্রী যোগীতা বালীর কাছে আবার ফিরে আসেন।
বাংলা ছবির ‘মৃগয়া’ তে মৃণাল সেন মিঠুনকে সঙ্গী করেছেন। আর তারপর তৈরি হয়েছে রেকর্ডের ইতিহাস। বাংলা থেকে ভারতের বিনোদন জগতে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে বোম্বে ছুটে যান তিনি। তারপর কঠিন লড়াই করে মারাঠা ভূমিতে বঙ্গ সন্তানের বিজয়গাঁথা। আনজানে ও ফুল খিলে হ্যায় গুলশান গুলশান এ কিছু ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন।
তবে ১৯৭৮ সালে মেরা রক্ষক সিনেমায় অভিনয় করে, মিঠুন জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহন করেন। এরপর একে একে মুঝে ইন্সাফ চাহিয়ে, ঘর এক মন্দির, প্যার ঝুঠা নেহি, স্বর্গ সে সুন্দর এবং প্যায়ার কা মন্দির সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকমনে পাকাপাকি জায়গা করে নেন। তিনি প্রায় ৪০০ এর বেশি ফিল্মে অভিনয় করেছেন। এরপর ১৯৮২ সালে ডিস্কো ডান্সার সিনেমায় (Disco Dancer movie in 1982) অভিনয় করে তিনি পুনরায় প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
আরো পড়ুন- Ayodhya hills : ছৌ নাচের দেশ কি রামের অযোধ্যা পাহাড়? পুরুলিয়ার প্রিয় কি পাহাড় কি?
তিনি শুধু বলিউড নয় বাংলা, ওড়িয়া, তামিল, ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, কন্নর প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় সিনেমা করেছেন। বাংলায় তাঁর প্রথম কমার্শিয়াল ছবি ‘ত্রয়ী’। তিনি একাধিকবার সেরা অভিনেতা ও সেরা সহ অভিনেতার জন্য জাতীয় পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০০৭ সালে তাকে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করা হয়।তবে শুধু রুপলি পর্দায় নয় দূরদর্শনের পর্দাতেও তিনি সমানভাবে সাবলীল। তিনি বেশ কিছু রিয়ালিটি শো এর সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন।
আরো পড়ুন- Victoria Memorial : কলকাতার অহংকার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ইতিহাস জানেন?
এবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করা বাংলার মিঠুন দাদাকে নিয়ে কথা বলা যাক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন মিঠুন। দুজনের মধ্যে ভাই বোনের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্যও হন। কিন্তু কথায় আছে রাজনীতিতে কেউ কারোর নয়। নানা কারণে মতভেদ এবং দূরত্ব তৈরি হওয়া।
আরো পড়ুন- Howrah Bridge: আজও কলকাতার সেরা আকর্ষণ রবীন্দ্র সেতু! পোশাকি নাম ‘ হাওড়া ব্রিজ’
এরপর নানা রাজনৈতিক বিতর্কেও নাম জড়ায় তাঁর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসা করাতে চলে যান তিনি। ফিরে এসে সবাইকে চমকে দিয়ে যোগদান করেন বিজেপিতে। তিনি নিজের পরিচয় দেন জাত গোখরো বলে। সত্যি বাঙালিকে জাতীয় স্তরে সম্মানিত করেছেন যাঁরা , তাঁদের মধ্যে মিঠুনের নাম অবিস্মরণীয়।