Breaking Bharat: Kota Rani : ভূস্বর্গ কাশ্মীরের মহারানীর নাম জানেন ? জানেন কাশ্মীরের ক্লিওপেট্রা কোটারানির কাহিনী? (Cleopatra Kotarani of Kashmir)
পৃথিবীর মধ্যেই স্বর্গের অবস্থান ! আর সেটা যদি কোথাও হয় তাহলে কাশ্মীর ছাড়া অন্যথা নয়। একাধারে সৌন্দর্য অন্যদিকে রোমাঞ্চ, একাধারে আকর্ষণ অন্যদিকে ভয়, এই সব কিছু নিয়েই গড়ে উঠেছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর। বরফে ঢাকা পাহাড়, বর্ণময় ফুলের সমারোহ। প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে সাজিয়েছে ভূস্বর্গকে।
চতুর্দশ শতকে কাশ্মীরে দায়িত্ব পান ‘ভূস্বর্গের ক্লিওপেট্রা’
প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে একবার না একবার জীবদ্দশায় এই স্বর্গে যাওয়ার। কাশ্মীর নিয়ে বা ভূস্বর্গ নিয়ে নানান কথা শোনা যায়। কিন্তু সবটাই এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নিয়ে। নৈসর্গিক দৃশ্য ছাড়াও ভূস্বর্গের একটা নেপথ্য জীবন আছে ,জানেন কি? আজ তার সঙ্গেই পরিচয় করাব আপনাদের।
পৃথিবীর মধ্যে থাকা এই স্বর্গের অধিষ্ঠাত্রী কিন্তু দেবতা নন বরং রানী। তাঁর গল্পটা অনেকেরই অজানা। কাশ্মীরে ক্লিওপেট্রা কোটারানির কাহিনী। প্রকৃতি নিজেই এক সুন্দরী নারী আর তাকে রক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন আরও এক নারী। চতুর্দশ শতকে কাশ্মীরে দায়িত্ব পান ‘ভূস্বর্গের ক্লিওপেট্রা’। তিনি শুধুমাত্র একজন সাহসী যোদ্ধাই ছিলেন না ছিলেন একজন দুর্দান্ত প্রশাসক (last hindu queen of kashmir) ।
তাঁরই সামরিক কৌশল নাকি সেই সময়ে অনায়াসে দশ গোল দিতে পারত যে কোনও রাজার মগজাস্ত্রকে।কোটারানির গল্প শুরু হয়েছিল কাশ্মীরের শাসক সহদেবের গল্প দিয়ে। ১৩০১ সালে সহদেব নামে একজন শাসক কাশ্মীরে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তাঁর শাসনকালে তাঁর দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিলেন, একজন হলেন লাদাখের বিদ্রোহী যুবরাজ রিঞ্চিন এবং অন্য জন ছিলেন সোয়াত উপত্যকার শামির।
তাঁর সেনাপতির নাম ছিলো রামচন্দ্র। এই রামচন্দ্রের মেয়ে ছিল কোটা রানি। অসম্ভব বিচক্ষণ এই মহীয়সী নারী কে কাশ্মীরের ‘ক্লিওপেট্রা’ বলা হয়, কেননা কোটারানি তাঁর সাম্রাজ্যকে আক্রমণকারীদের হাত থেকে নিজের বুদ্ধিতে রক্ষা করেছিলেন। কোটা রানি কাশ্মীরে প্রাচীন সংস্কৃতিটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন এবং যে কোনও মূল্যে হিন্দু শাসন ব্যবস্থা রক্ষা করতে সদা সচেষ্ট ছিলেন।
জনশ্রুতি আছে, স্থানীয় সমর্থন আদায়ের জন্য, রিঞ্চন রামচন্দ্রের পুত্র রাবণচন্দ্রকে লে এবং লাদাখের প্রশাসক নিযুক্ত করেছিলেন এবং তাঁর বোন কোটা রনিকে বিয়ে করেন।এভাবে বৌদ্ধ রিঞ্চিন কাশ্মীরের শাসনের কর্তৃত্ব লাভ করেছিলেন এবং কোটারানিকে বিবাহ করেছিলেন। কথিত আছে এই বিয়ের প্রস্তাব কোটারানিই করেছিলেন (Kota Rani last Hindu queen)।
কোটা রনির জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি:
ঐতিহাসিকরা বলেন যে এই সিদ্ধান্তের পিছনে কোটারানির এক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কারণ ছিল।কারণ তিনি জানতেন যে কাশ্মীরের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার, পুরোপুরি ভারতীয় হতে পারলেই তবেই তার রাজ্যকে বাঁচানো যায়, রাজ্যের মঙ্গলের জন্য, যুদ্ধ থেকে শান্তি পথে চলার জন্য একটাই পথ ছিল।
বিয়ের পরে তিনি দূরদর্শিতার সাথে শাসন শুরু করেছিলেন। রাকেশ কৌলের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘দ্য লাস্ট কুইন অফ কাশ্মির ‘কোটা রণির জীবন ও কিংবদন্তি অবলম্বনে নির্মিত। সম্প্রতি রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট ঘোষণা করেছে যে তারা কোটা রনির জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করবে (Last Hindu Queen Of Kashmir)।
কোটারানি রিঞ্চিনকেও হিন্দুধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলেন এবং তাঁর ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে, রিঞ্চিন হিন্দু ধর্মকে নিজ ধর্ম মেনে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে তাঁর পরিকল্পনা হিন্দু ধর্মের ঠিকাদাররা গ্রহণ করেননি।রিঞ্চিনের মৃত্যুর সময়, তাঁর ছেলে হায়দার খুব ছোট থাকায়, রানী এই রাজ্যটি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু উদয়ন দেব তাঁর সামনে সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করতে হাজির হয়।
তাঁর রাজ্যের সুরক্ষা এবং তাঁর সংস্কৃতি বজায় রাখার তাগিদকে মাথায় রেখে কোটারানি উদয়নদেবকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন। রানীর দু’জন বিশ্বাসী পাত্র ছিলেন, একজন তাঁর ভাই ভিক্ষন ভট্ট এবং অপর জন শাহমির। তবে কাশ্মীর কোনদিনই খুব একটা শান্তভাবে থাকতে পারিনি। আবার আক্রমণের গ্ৰহন নেমে আসে । আর এক তাতারি সর্দার শত শত তাতারিদের নিয়ে কাশ্মীর আক্রমণ করে (Queen Of Kashmir Kota Rani)।
আরো পড়ুন- k c paul umbrella : শীত গ্রীষ্ম বর্ষার ভরসা কে সি পালের ছাতা! এখন কেমন আছে সেই ছাতার দোকান?
ভাই সহদেবের মতো উদয়নদেব তাঁর স্ত্রী ও রাজত্বকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফেলে তিব্বতের দিকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু রানী পালিয়ে যাননি, তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করেন, সেনাবাহিনীকে দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন। তাঁর দেশপ্রেমের আবেদন স্থানীয় নাগরিককে প্রভাবিত করেছিল এবং তাঁর এই কণ্ঠে র আহবানে স্থানীয় নাগরিকরাও যুদ্ধে অংশ গ্ৰহন করে।
আরো পড়ুন- বেদের মেয়ে জোৎস্না দেখেছেন? এই ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যে জানেন? Beder Meye Josna
এভাবে রানী কাশ্মীরের উপরে হিন্দু শাসন বজায় রাখতে সফল হয়েছিলেন।কোটারানি খুব বুদ্ধিমান এবং দুর্দান্ত চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি শ্রীনগর শহরে তার নামে নামকরণ করে ” কুট কোল ” নামে একটি খাল নির্মাণ করে বন্যার হাত থেকে শহরকে বাঁচিয়েছিলেন। এই খালটি শহরের প্রবেশপথে ঝিলাম নদী থেকে জল পায় এবং আবার শহরের সীমা ছাড়িয়ে ঝিলাম নদীর সাথে মিশে যায়।
আরো পড়ুন- Sunny Leone : পর্নষ্টার তকমা ঝেড়ে সানি লিওনের নারীত্বের পূর্ণতা পাওয়ার কঠিন লড়াই!
কোটা রানির এই গল্প ইতিহাসের পাতা থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের সামনে আসে নি ইতিহাস এই অধ্যায়টি। এই কাহিনীতে আছে রানি র ধর্ম ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য সংগ্রাম, সংকটে সময় রাজা যখন তাঁর প্রজাদের থেকে দূরে পালিয়েছিলেন, তখন এক স্ত্রী স্থানীয় নাগরিক এবং সেনাবাহিনীকে দেশপ্রেমিক চেতনা উজ্জীবিত করেন এবং যুদ্ধে র জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
শত্রুদের পরাজিত করে নিজের দেশকে রক্ষা করেন। তাঁর কাজকর্ম করার পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ থাকলেও তাঁর জেদ এবং ইচ্ছা শক্তিকে কুর্নিশ জানান ইতিহাসবিদরা।