Breaking Bharat: সোনাগাছির নিষিদ্ধ পল্লীর অজানা কাহিনী, জানলে আপনি খুব কষ্ট পাবেন? আজ কথা হবে এমন এক অজানা সত্যি নিয়ে, জীবন যাপনের। আজকের বিষয় সোনাগাছির নিষিদ্ধ জীবন (sonagachi red light area)।
আচ্ছা নিষিদ্ধ মানেই তা কি খারাপ? অন্তত ছোটো থেকে আমাদের সেভাবেই শেখানো হয়, তাই না? কিন্তু সব ধারণা যে সত্যি এমনটা কিন্তু নয়। আমরা একাধিক ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজেদের মতো করে অনেক কিছু নিয়ে মন্তব্য করি। সত্যি মিথ্যে যাচাই করি কি?
সোনাগাছির নিষিদ্ধ পল্লীর অজানা কাহিনী:
মেয়ে মানেই যেন কয়েক প্রহরের বিলাস সঙ্গিনী। যেন ভোগ্য বস্তু হয়ে উঠেছে নারী। বারংবার সেই এক নিরিখেই বিচার করা হয়েছে নারীর অস্তিত্ব আর যোগ্যতাকে। তাই সোনাগাছি – বাংলা ভাষায় প্রায় নিষিদ্ধ একটি শব্দের মত উচ্চারিত হয় এই নাম। এই স্থানেই যেন শারীরিক চাহিদা পূরণের সুপ্ত বাসনার দাপুটে প্রকাশ ঘটে। মূল্য ১০০টাকা থেকে শুরু। অর্থাৎ নারীর সম্ভ্রম বিক্রী হয় ওই মূল্য দিয়েই। টাকার পরিমাণ বাড়ে শরীরের খিদের চাহিদা অনুসারে।
ছোট্ট একটা খুপড়ির মত ঘরে যৌনতা বিক্রি করে এখানকার মহিলারা। একটা বিছানা, একটা টুল আর জলের বোতল ছাড়া সে ঘরে আর কিছুই নেই বললে চলে। কপাল করে কেউ কেউ টিভি নিতে পারে ঘরে, অথবা সস্তার মিউজিক সিস্টেম। বেশীর ভাগ ঘরেই জানলা নেই। যে কটা ঘরে আছে সেই সব ঘরের জানলা বলতে গেলেই বন্ধ। কারণ প্রকাশ্যে এই ঘরের ছবি আসা বারণ।
নিষিদ্ধ পল্লীর ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। মেয়ে হোক বা নারী – সোনাগাছি (Sonagachi) তে তার পরিচয় রেট দিয়ে। মিনিট ঘণ্টার নিরিখে জীবনের সুখপাখিটা হিসাব করে। কেউ যেন পৌরষত্ত্বের দাম্ভিক আগ্রাসনকে শরীরের শক্তিতে স্পষ্ট করতে চায় বিপরীত লিঙ্গের অঙ্গে।
সোনাগাছির ইতিহাস নিয়ে অজানা তথ্য:
সোনাগাছি নিয়ে নানান মিথ ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। জানা যায়, সোনাগাছির পথ চলা প্রথম শুরু হয়েছিল উনিশ শতকেই (Kolkata Sonagachi Red Light District)। কলকাতা তখন ব্রিটিশরাজের নয়া রাজধানী।
নতুন রাজ্য শাসন করার জন্য ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন একদল তরুণ যুবা। পকেটে টাকা, জীবন তখন ফুর্তির গড়ের মাঠ। শারীরিক খিদে মেটাতে দেশের নেটিভদের বিধবা মেয়েদের ধরে আনতে লাগলেন সোনাগাছিতে।
কলকাতা শহরে বেশ্যাবৃত্তির বোধহয় সেই শুরু। তবে অনেকেই ভিন্ন মত পোষণ করতে পারেন কেউ কেউ বলেন অবশ্য ওই যে আগে কর্ণওইয়ালিস স্ট্রিট ও পশ্চিমে চিতপুর—তার মাঝের গোটা জায়গাটা নিয়ে যে বেশ্যাদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল, সেই জায়গাটা কিন্তু আদতে নাকি ছিল ‘প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের’। কলকাতা শহরের বিখ্যাত বড়োলোক ‘বাবু’দের মধ্যে তিনি একজন।
তাঁর ও স্থানীয় কয়েকজন ধনী জমিদার ‘বাবু’র উদ্যোগেই নাকি শুরু হয়েছিল ‘সোনাগাছির ব্যবসা’। সানাউল্লাহ নামে এক মুসলমান সাধুবাবার নামে তারপর একসময় জায়গাটার নাম হয় ‘সোনাগাছি’ ও সেই নামেই আস্তে আস্তে সোনাগাছি ‘সোনাগাছি’ হয়ে ওঠে (Asia’s BIGGEST RED LIGHT AREA)।
সোনাগাছিতে দুর্গা পূজা শুরু হয়েছে বেশ কিছু বছর ধরে। নতুন পরিচিত এলাকার। কিন্তু এখনকার মাটি না নিলে মা দুর্গার মুর্তি গড়া নাকি সম্ভব নয়। তাই পুজোর দিনগুলো অন্যরকম। কিন্তু বাকি ৩৬০ দিন সেই অন্ধকারের কারাজালে বন্দি থাকা। এখানকার অনেকেই বলেন, এই কাজটাই নাকি ভালো। স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকা যায়। এদের মাঝেই গাঙ্গুবাই আছেন বটে, এদের কথা বলার জন্য।
সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কিছু প্রশ্ন মনে আসে, যেমন যৌনকর্মীর এই ভয়ঙ্কর জীবন কি তারা নিজেরা স্বেচ্ছায় বেছে নেন, নাকি বাধ্য হন? টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে কাউকে কাউকে বাধ্য করা হলেও বেশীরভাগই কিন্তু এখানে স্বেচ্ছায় আসেন।
আরো পড়ুন- Mayapur Iskcon : কৃষ্ণ নাম হরিনাম বড়ই মধুর, মায়াপুরের ইসকন সম্পর্কে জানেন?
নিজের ইচ্ছেতেই সাহস করে তাই যারা বেছে নেন যৌনকর্মীর মতো কষ্টের, লাঞ্ছনার জীবনকে, তাদের কুর্নিশ না জানিয়ে উপায় থাকে না! সমাজের বাকি মহিলাদের জন্য তারাই যেন রক্ষা কবচ। কারণ পুরুষের পাশবিক রূপকে সমাজের অগোচরে রাখার নিরলস প্রচেষ্টা তাদের, আজীবন (a red light area in Kolkata)।
আরো পড়ুন- Arm veins : অনেকের হাতের শিরা উপশিরা দেখা যায় বলে মনে হয়, জানেন কি কেন এমন হয়?
সোনাগাছিতে বাঙালি মহিলার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে?
জানা যায়, সোনাগাছিতে বাঙালি মহিলার (Bengali woman in Sonagachi) সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে, মূলত নেপাল, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মেয়ে এখানে রোজগার করতে এসে থাকেন। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি (ডিএমএসসি) সোনাগাছি প্রকল্প সহ পশ্চিমবঙ্গের ৬৫,০০০ যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।
আরো পড়ুন- Laptop charge : সারাক্ষণ ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে কাজ করছেন? বড় বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
এই সংস্থা যৌনকর্মীদের অধিকার স্বীকৃতি ও যৌনব্যবসার বৈধীকরণের দাবি জানিয়ে থাকে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন শিক্ষা ও কর্মসংস্থানগত কর্মসূচি পালন করে এবং ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে থাকে।
নারী আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার পেল কিনা, তা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে। কারণ কবিগুরুকে জবাবদিহি করতে হবে যে আমাদেরই। সুন্দরী কলকাতার কলঙ্ক নাকি চাঁদ হয়ে জ্বল জ্বল করছে সোনাগাছি? ভেতরে পুড়ছে সমাজের অবক্ষয়!