Breaking Bharat: নাচ দেখতে ভালোবাসেন? আপনি কি নৃত্য প্রেমী? ছৌ নৃত্যশিল্পীদের (Chhau Dancer) ব্যাপারে কতটা জানি আমরা? সুজলাং সুফলাং বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে সংস্কৃতি। সঙ্গীত নৃত্য কবিতা মিলে মিশে বাংলাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। এই বাংলার এক বিশেষ সংস্কৃতি হল লোকনৃত্য। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আর শিল্পীদের নিয়েই অনেক অজানা কথা আজ জানবো আমরা।
ছৌ নৃত্যের উৎপত্তি ও চর্চা পশ্চিমবঙ্গে। যদিও পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের প্রভাব একেবারেই অস্বীকার করা যায়না। নৃত্যের উৎপত্তিস্থল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায়। অনেকেই ভাবেন নৃত্যের এমন অদ্ভুত নাম কেন? আসলে সঠিক ভাবে এই নিয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
“ছৌ” শব্দের উৎপত্তি নিয়েও তাত্ত্বিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ মনে করেন এটি এসেছে তিব্বতি “ছাম” থেকে, কেউ মনে করেন শব্দটি সংস্কৃত “ছায়া” থেকে এসেছে। সাধারণত, মুখোশের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ছৌ নৃত্য সংগঠিত হয়। এর কিছু প্রকারভেদ নিম্নে দেওয়া হয়েছে।
- ১. পুরুলিয়া ছৌঃ পুরুলিয়ায় উৎপত্তি
- ২. সরাইকেল্লা ছৌঃ ঝাড়খন্ডের সরাইকেল্লায় উৎপত্তি
- ৩. ময়ূরভঞ্জ ছৌঃ এই ছৌ নৃত্যের উৎপত্তি ওড়িশা রাজ্যে।
গ্রামীণ এলাকায় মাঠে এবং শহুরে এলাকায় মঞ্চে ছৌ নৃত্যের অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ছৌ’য়ের আসর বসে। ছৌ নৃত্যে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী ও উপাখ্যান অভিনয় করে দেখাতে হয়। বীর ও রুদ্র রস সম্পলিত এই কাহিনীগুলো মূলত রামায়ণ ও মহাভারত থেকে সংগৃহীত।
তবে, আপনি কি জানেন একটা সময় পর্যন্ত এই শিল্পকলায় মহিলাদের অধিকার ছিল না? যদিও বর্তমানে এই চিরকালীন অচলায়তন ভেঙে নারীরাও ছৌ নৃত্যে এসেছেন। প্রায় এক দশক ধরে ছৌ নৃত্যে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। আসলে মহিলাদের কেন বাদ রাখা হত, সেই প্রসঙ্গে একটি যুক্তি দেওয়া হয়।
বলা হয়, ছৌ নৃত্য যেহেতু বীররসের নাচ এবং বিভিন্ন শারীরিক কসরতের অভিনয় করতে হয় তাই এই নৃত্যে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল না, প্রয়োজনে পুরুষরাই নারীর বেশ ধরত। তবে সময় আর মানসিকতা বদলেছে। মেয়েরা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে।
আরো পড়ুন- Ila Majumder : মহিলা ইঞ্জিনিয়ার কেন নয়? ইলা মজুমদার, তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার
এই প্রসঙ্গে যার নাম সবার আগে বলা দরকার, তিনি হলেন মৌসুমী চৌধুরী। নারী ছৌ শিল্পীদের অন্যতম অগ্রপথিক পুরুলিয়ার এই সন্তান। ছৌ নৃত্য করে দেশ বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। বিশেষ প্রশংসা করতে হয় সরকারের। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছৌ নৃত্যের ব্যপক পৃষ্ঠপোষকতা করে।
তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছৌ নৃত্য লোকজ সমাজ পেরিয়ে আধুনিক সমাজে চর্চিত হচ্ছে। ছৌ নৃত্যের জন্য কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেখানে শিশু ও নারীরাও ছৌ নৃত্যের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারছেন। করোনাকালে এই নৃত্যের মাধ্যমে জন সচেতনতা গড়ে তুলতেও দেখা যায়।