Breaking Bharat: মরুভূমির মরুযান, স্বয়ং ফেলুদা পর্যন্ত যার স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন- সেই প্রাণীকে (Camel facts ) একটু বিশেষ গুরুত্ব না দিলে চলে! ” সোনার কেল্লা” যারা পড়ে বা দেখে থাকবেন তারা হয়তো উট সম্পর্কে কিছু ধারনা পেতে পারেন। কারণ লালমোহন গাঙ্গুলীর উট নিয়ে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণার খোলসা করেছিলেন প্রদোষ মিত্র।
ট্রেনের সেই দৃশ্য ভুলে যাননি বাঙালি দর্শক। তবে অন্যান্য প্রাণীদের যা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি , উট তার থেকে অনেকটাই আলাদা। এবার যদি রাজস্থান ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে এই প্রতিবেদনটি একবার শেষ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিন।
আপনি কি জানেন,উটের মত এত অসাধারণ এক প্রাণী বিজ্ঞানের বিস্ময়। এই প্রাণীটির শারীরিক গঠন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এর সহজাত প্রবৃত্তি, প্রাণীবিদদের কাছে গবেষণার বিষয়। একজন সাধারন মানুষ কতটা গরম সহ্য করতে পারেন? গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর দৌল তে গরমকালে ৪০ ডিগ্রির এর নিচে তাপমাত্রা প্রায় থাকে না বললেই চলে। হাঁসফাঁস অবস্থা হয় মানুষ থেকে পশু প্রত্যেকের।
অনেকই গরমে মারা যান। কিন্তু যে প্রাণীকে নিয়ে আলোচনা করছি তার বোধহয় গরম লাগে না। না হলে কেউ ৫৩ ডিগ্রী গরম সহ্য করে বালির উপর দিয়ে দৌড়াতে পারে? মরুভূমির বালিতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যে প্রায় অসম্ভব। অথচ উট সেই বালিতে পা ফেলে রাখে কোন রকমের অস্বস্তি বা অসুস্থতা ছাড়াই। এতো না হয় গেল গরমের কথা। ঠান্ডার বিষয়টি জানলেও চোখ কপালে উঠবে আপনার। আপনি ঠিক কতটা শীত সইতে পারেন? (interesting facts about camels)
বা আপনার পোষ্য কিংবা এলাকায় যে অন্যান্য প্রাণী থাকে তারা কতটা ঠান্ডা নিতে পারে ? উট সত্যিই জগতের মহা বিস্ময়কর প্রাণী বটে (camels so amazing)। মাইনাস-১ ডিগ্রি শীতেও টিকে থাকে অবলীলায়। এই তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার।
আপনি হয়তো জানেন যে মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর আশেপাশে থাকে। যদি দেহের অভ্যন্তরীণ মানে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮.৫ ডিগ্রির (১০২ ফারেনহাইট) বেশি হয়ে যায়, তখন অস্বস্তি শুরু হয়ে যায় এবং শরীরের অঙ্গগুলোর ক্ষতি হতে থাকে। ৪০ ডিগ্রির (১০৪ ফারেনহাইট) বেশি হয়ে গেলে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, খাদ্যতন্ত্র ব্যাপক ক্ষতি হয় (camel characteristics)।
৪১ ডিগ্রি (১০৫ ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় শরীরের কোষ মরে যেতে শুরু করে। তখন শরীর নিজে থেকেই পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করে। কীভাবে? যখন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায়, তখন শরীর ঘেমে বাড়তি তাপ বের করে দিয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সাধারণত শরীর থেকে জল বেরিয়ে গেলে জল খেয়ে আবার তা পূরণ করতে হয় (camel a special animal)। কিন্তু ওদের তো সেই উপায় নেই? মরুভূমিতে অতিরিক্ত জল উট পাবে কোথায়?
এমনিতেই এই প্রাণীটি মাসের-পর-মাস জল না খেয়ে কাটায়। এই কারণে উটের শরীরে এক বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে (Camel has a special system in its body)। ভোরবেলা এর শরীরের তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি থাকে। তারপর আবহাওয়া যখন প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়, তখন অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। এর পর থেকে এটি ঘামা শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত জল ধরে রাখে। এভাবে প্রতিদিন উট স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে প্রচণ্ড জ্বরের তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করে।
আরো পড়ুন- Sinus Symptoms : সর্দি কাশির ধাত আছে? মাথার যন্ত্রণা হলেই কি সাইনাস? সাইনাস রোগটা আসলে কি?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে তাহলে উট জল খায় কখন আর কতটা? আপনাকে জানাই, উট যখন একবার জল পান করা শুরু করে, তখন প্রায় ১৩০ লিটার জল নিমেষে শেষ। পরিমাণটা প্রায় তিনটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাঙ্কের সমান। আর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে জল খেয়ে ফেলতে পারে। উটের কুজ হচ্ছে চর্বির আধার। চর্বি উটকে শক্তি এবং পুষ্টি যোগায়। আর পানি শরীরের যাবতীয় আভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সচল রাখে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে।
আরো পড়ুন- Earphone : ইয়ারফোন ব্যবহার করেন? তাহলে অবশ্যই ইয়ারফোন কেনার আগে এই বিষয়গুলো জেনে নিন
একবার খাওয়া দাওয়া মানে খাবার আর জল দুটিই শরীরে প্রবেশ করার পর, ছয় মাস পর্যন্ত উট সেই দিয়েই কাজ চালাতে পারে। আর সবশেষে লালমোহন গাঙ্গুলীর প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় কাঁটা বেছে খায় না।এর উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা হলো কাঁটা যুক্ত গাছপালা চিবানোর ক্ষমতা, যা অন্য কোনো প্রাণীর নেই। বড় বড় কাঁটাসহ ক্যাকটাস সাবাড় করে দিতে পারে উট।
আরো পড়ুন- Molasses : গুড়ের মিষ্টি গন্ধ আর স্বাদ মানুষের মন কেড়ে নেয়, কিন্তু সাবধান ! ভেজাল গুড় খাচ্ছেন না তো?
আসলে উটের মুখের ভেতরের দিকটাতে অজস্র ছোট ছোট শক্ত আঙ্গুলের মত বিন্যাস রয়েছে, যা কাঁটার আঘাত থেকে একে রক্ষা করে। এমন এক জিভ আছে যা কাঁটা ফুটো করতে পারে না। তাহলে বুঝলেন তো কত বড় বিস্ময় মরুভূমির এই মরুযান! পারলে একবার উটে চড়ে দারুন একটা রাইড উপভোগ করে নিতে ভুলবেন না।