Breaking Bharat: “জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা রবে “? সত্যি তো মানুষকে অমরত্ব লাভ করতে পারেনা? (immortality possible)
আজকের বিষয়টি দার্শনিক, তাত্ত্বিক নাকি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আপনি দেখবেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে সবাই ভাবেন “মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে” , কিন্তু সারা জীবন বেঁচে থাকা যায় কি? ইতিহাস এবং বিজ্ঞান এ ব্যাপারে দুজনেই একমত, শুরু হলে শেষ হবেই। কিন্তু আজকের যুগে সব অসম্ভবই প্রায় সম্ভব হয়ে যাচ্ছে ,তাহলে এটা নিয়ে কি কোন ভাবনা চিন্তা নেই? এর উত্তর খোঁজার চেষ্টায় আজকের এই প্রতিবেদন (immortality research)।
আপনি কি জানেন মানুষের অমরত্বের চাবিকাঠি শরীরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে? (People gain immortality) আমাদের ক্রোমোজোমের ঠিক শেষ প্রান্তে থাকা টেলোমিয়ার এই কাজের জন্য দায়ী। বিষয়টা তাহলে একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলা যাক। আমাদের শরীর অসংখ্য কোষের সমন্বয় গঠিত হয়, যার ঠিক কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস। এই নিউক্লিয়াসের মধ্যেই কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় আছে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA )বা ক্রোমোজোম।
এই ক্রোমোজোমের ঠিক শেষ প্রান্তে ডিএনএ-এর যে বিশেষ অংশটি রয়েছে তাকে বলা হয় টেলোমিয়ার। অর্থাৎ আমাদের মানব দেহের প্রতিটি কোষে যেহেতু ৪৬ টি ক্রোমোজম আছে এবং প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি বাহু, সেহেতু মোট টেলোমিয়ারের সংখ্যা দাঁড়ালো গিয়ে ৯২। এখন প্রশ্ন এর কাজটা কি? এটা সহজ ভাবে বোঝাতে গেলে বলতে হয় জুতোর ফিতে নিশ্চয়ই দেখেছেন আপনি? ফিতের ঠিক শেষ প্রান্তে ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের অংশ থাকে যা ফিতেকে ধরে রাখে।(Can a person become immortal?)
কোনোদিন ওই প্লাস্টিকের অংশটাকে ভেঙে দিয়ে লক্ষ করুন তো জুতোর ফিতেটার ঠিক কি অবস্থা হয়? মানে ফিতেগুলো এলোমেলো হয়ে যাবে যদি ওই প্লাস্টিকের অংশ না থাকে। আমাদের ক্রোমোজোমও ঠিক ওই জুতোর ফিতেটার মতন আর টেলোমিয়ার হলো প্লাস্টিকের অংশটা। টেলোমিয়ার আসলে আমাদের ক্রোমোজোমগুলিকে রক্ষা করে যাতে তারা অবিন্যস্ত না হয়ে পড়ে অথবা পরস্পরের সাথে যুক্ত না হয়ে যায়। যদি কোনো ক্রোমোজোমের টেলোমিয়ার না থাকে তাহলে তা কোষের বিভিন্ন ধরনের অস্বভাবিকতাকে ডেকে আনে, যা বহু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো রোগেরও কারণ।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এই টেলোমিয়ারের সাথে মানুষের বার্ধক্য বা মৃত্যু কিভাবে সম্পর্কিত। আসলে আমাদের কোষ বিভাজনের সময় প্রতিমুহূর্তে ডিএনএ-এর প্রতিলিপিকরণ ঘটে যাকে বলা হয় ডিএনএ রেপ্লিকেশন। এই পদ্ধতিতেই একটি ডিএনএ থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটে এইভাবে সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (biological immortality in humans)
কিন্ত গণ্ডগোলটা বাধে তখনই যখন ডিএনএ-এর শেষপ্রান্তের প্রতিলিপিকরণ শুরু হয়। একটি ডিএনএ স্ট্র্যান্ডের প্রথম থেকে প্রতিলিপিকরণ হতে থাকে আর অল্প অল্প করে নতুন ডিএনএ তৈরি হতে থাকে। শেষপ্রান্তে এসে রেপ্লিকেশনে সহয়ককারী যে উপাদানটি থাকে সেটির জন্য শেষপ্রান্তটি আর রেপ্লিকেট হতে পারে না।
এক্ষেত্রে একটা উদাহরন দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে। ধরুন, আপনি আপনার ঘরের মেঝেতে দাঁড়িয়ে মেঝেটাই রং করছেন। কিন্তু এমন একটি সময় আসবে যখন আপনি যেই জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন সেই অংশটুকু আর রং করতে পারবেন না। এইভাবেই প্রতিবারের কোষ বিভাজনের সাথে সাথে টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্যও ধীরে ধীরে কমতে থাকে আর একটা সময় আসে যখন কোষটির মৃত্যু ঘটে।
আরো পড়ুন- Phone for Viruses: আপনার ফোনে কি ভাইরাস আছে ?গোপন নথি কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে না তো ?
আর এই টেলোমিয়ার শর্টনিংই হলো বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান কারণ। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মধ্যে টেলোমারেস নামে একটি উৎসেচকের উপস্থিতিতে এই টেলোমিয়ার এর দৈর্ঘ্য কমে না, বরং প্রতিবার যেটুকু ক্ষয় হয় তা পুনরায় ফিরে আসে। কিন্তু আমাদের দেহকোষের মধ্যে এই উৎসেচকের কর্মক্ষমতা খুবই কম। আর ঠিক এই কারণেই ডিম্বাণু বা শুক্রাণু অমর হলেও মানুষ অমর হতে পারে না। বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ওবেসিটি, স্ট্রেস, উদ্বেগ, চিন্তা অথবা ধূমপান টেলোমিয়ার শর্টনিং এর এই পদ্ধতিকে যথেষ্ট ত্বরান্বিত করে।
আরো পড়ুন- Mobile Battery: এখনকার মোবাইলে ব্যাটারি খোলা যায় না ! কেন বলুনতো এই পরিবর্তন ?
তাই হাজার চেষ্টা করেও অবশ্যম্ভাবী পরিণতি মানে বার্ধক্য বা মৃত্যুকে এড়ানো যাবে না। তবে হ্যাঁ সময় দীর্ঘায়িত করা যেতে পারে । সুস্থ থাকার মধ্যে দিয়ে অনেক দিনের জীবন বাঁচা যেতে পারে । আর এই পুরো টাই কিন্তু আপনার হাতে।