দু’লাইনের ছড়াটা মনে আছে?
“কানামাছি ভোঁ ভোঁ,
যাকে পাবি তাকে ছোঁ”
Breaking Bharat: হাত বাড়িয়ে দেখুন তো কাউকে পেলেন কিনা? কিংবা ধরুন হাতের উপর হাত আঙ্গুলের সঙ্গে আঙুল মিলিয়ে কলা গাছ তৈরি। তারপর একজন এসে লাফিয়ে বেরোবে, একবার যদি জামা বা দেহ ঠেকে যায় , তাহলে আউট! সেই দিনগুলো আজ আর নেই। সেই খেলা গুলো হারিয়ে গেছে তেপান্তরের মাঠে। তবু অবসরে ফেসবুকে যখনই নস্টালজিয়ার কথা আসে, এ দৃশ্য বড্ড বেশি করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি বাকি নেই? আজ মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন, কাজের ফাঁকে নিজেকে করতে বড় ইচ্ছে হয়।
আজকাল বৃষ্টি পড়লে যখন ছাতা মাথায় দেন তড়িঘড়ি,বা আশ্রয় নেন কোনও শেডের তলায়, তখন কি মনে পড়ে কচু পাতা দিয়ে কতবার মাথা দেখেছেন ছোটবেলায়?
জল জমা রাস্তায় কীভাবে ছপাং ছপাং করে খালি পায়ে লাফাতে লাফাতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
কিংবা মাঠের মাটি যখন জলে ভিজে কাদা হয়ে গেছে, সেই কাদা সারা গায়ে মেখেছেন, মাখিয়েছেন আর তারপর বকুনি খেয়েছেন। তবুও আনন্দ পেয়েছেন খুব।
বিকেল হতেই খড়ি দিয়ে দাগ কেটে চৌকো করে ঘর এঁকে কিতকিত খেলা। এক পায়ে লাফাতে লাফাতে কতবার যে পায়ের তলাটা লাল হয়ে গেছে, আজ হয়তো মনেও নেই।
নিজে হাতে লাট্টু বানানো কিংবা গুলতি দিয়ে টার্গেট করে পেয়ারা, আম এই সবটা পেড়ে নেওয়া। তারপর পিঠে দু চার ঘা বা দমাদম মার। বাবাগো মাগো তখনকার মতোই, পরে আবার যেই কে সেই।
জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুডের জমানায় পাঁচটা আঙুল এ পাঁচটা পাঁপড় ঢুকিয়ে একটা একটা করে খাওয়ার মজা, আজ আর নেই। চলে গেছে, গেছে সেদিন অনেক দূরে হয়তোবা না ফেরার দেশে।
একসঙ্গে বন্ধুদের নিয়ে কলাপাতায় খাওয়া কিংবা সুপুরি গাছের ডালের মধ্যে বসে টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া, এসব সত্যিই আজ বিরল কান্ড।
গ্রামে বা পাড়ায় একটা মাত্র টিভি আর তাতেই সবাই মিলে হামলে পড়া – হাতে হাতে স্মার্টফোন নিয়ে ঘুরতে থাকা আমাদের “আমরা” এই দিনগুলো পেরিয়ে এসেছি, (We have passed these days) মনে পড়ে?
বাইরে বেরিয়ে খেলা যাচ্ছে না, অগত্যা ঘরে বসে চার টুকরো ছোট ছোট কাগজ নিয়ে তাতে চোর ডাকাত পুলিশ লিখে খেলতে বসে যাওয়া।
আরো আছে, ছোট্ট ছোট্ট রয়াল গুলি কেনার জন্য কি ভিড় না হতো। অল্প পয়সা দাম, তবুও লেবুর লজেন্স আর রয়াল গুলি কেনার কিছুতেই যেন উপায় বের হতো না।
জানেন সভ্যতা যত এগিয়েছে, আমরা তত আমাদের অতীতকে ভুলতে শিখেছি। ছোটবেলায় বাঁশ ধরে ধরে জলের উপর দিয়ে হেঁটে গেছি। পড়েছি আবার উঠেছি, কিন্তু আজকের প্রজন্মকে আমাদের বাড়ির পরবর্তী প্রজন্মকে সে ধারেও যেতে দিই না।
Mosquitoes : সারাক্ষণ কানের সামনে মশা ভনভন, এরা কি কোনও উপকারে লাগে?
ছেলে বা মেয়েদের গালে টোল পড়লে কি সেক্সি লাগে? এটা কিন্তু জিনগত ত্রুটি, জানেন কি?
মাঠের মধ্যে গাছের সঙ্গে দড়ি লাগিয়ে দোলনা আজকে বিলুপ্তপ্রায়। এখন তো কথায় কথায় টু হুইলার, দুবাই দৌড়ে হাতে একটা ছড়ি নিয়ে তাই টায়ারকে দৌড় করানোর কথা মনে পড়ে?
এভাবেই নিজের সত্তার সবটা হারিয়ে গেছে (He has lost everything)। বা বলা যেতে পারে আমরা হারিয়ে যেতে দিয়েছি। এগিয়ে যাবার নেশায় বেড়ে ওঠার অতীত গন্ধকে গা থেকে একেবারে মুছে ফেলেছি। একটা রাশভারী নাম দিয়েছি “নস্টালজিয়া”। আজ গান বেধেছি নতুন সুরে–
Breast : অল্প বয়সে স্তন ঝুলে পড়লে, আপনি আবেদনময়ী হয়ে উঠবেন কী করে ?
“হারিয়ে গেছে কত কিছু কলম রুমাল ছাতা
ছোটবেলার রংপেন্সিল হলদে ড্রইং খাতা
হারিয়েছে বাসের টিকিট লক্ষ্মী ঘি এর লুচির ঘ্রাণ
ভবিষ্যতে উড়তে গিয়ে, ছিঁড়তে বসেছে অতীতের টান”