Breaking Bharat: কোথায় আছে “নদীর ধারে বাস তার চিন্তা বারো মাস”। সুন্দরবন (Sundarban) মানুষের জন্য এটাই যেন প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হেনেছে সুন্দরবনের উপর। তছনছ করে দিয়ে গেছে সুন্দরবন বাসীর জীবন। সুন্দরবনের মানুষ উপলব্ধি করেছে যে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের মানুষের ঢল হয়ে দাঁড়িয়েছে ম্যানগ্রোভ। সুন্দরবনের মানুষকে জীবন-জীবিকা ধারণের জন্য অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে এই ম্যানগ্রোভের। দিনের-পর-দিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তছনছ হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনের বাদাবনে।
সুন্দরবনের মানুষ দেখেছে আম্ফান থেকে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ। সুন্দরবনের মানুষ দেখেছে একের পর এক ঘূর্ণিঝড় থেকে সুন্দরবনের মানুষকে আগলে রেখেছিল এই ম্যানগ্রোভ। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ প্রায় ধ্বংসের মুখে। আগামী দিনের কথা ভেবে ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবন বাঁচাতে এবার উদ্যোগী হলো সুন্দরবনের মহিলারা। সারাদিন সংসারের হেঁসেল ঠেলে এক ঘন্টা করে নিজের শিশুর মতন লালন-পালন করে বড় করে তুলেছে সুন্দরী, গরান, গেও, নারকেল, সুপারি মতন একাধিক চারাগাছ। আর এই চারা গাছ বড় হলে নিজেরাই সপ্তাহে একটি দিন ঠিক করে নদীর চড়ে গিয়ে রোপন করে দিচ্ছে গ্রামের মহিলারা।
গ্রামের মহিলারা জানে সুন্দরবনের একাধিক অঞ্চলের নদী বাঁধের অবস্থা বেহাল । সুন্দরবনের একাধিক জায়গায় রয়েছে মাটির নদী বাঁধ। তোমার কত সর্বগ্রাসী নদী একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে নদী বাঁধ। একটু ঝড়ো হাওয়াতে নদী বাঁধ ভেঙে নোনা জলে প্লাবিত হয়ে যায় ফসল জমি। জমিতে নোনা জল ঢুকে যাওয়ায় আর হয়না চাষবাস। চাষবাস না হয় চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয় সুন্দরবন বাসীর। সুন্দরবনের মহিলারা জানে এই মাটির নদী বাঁধ কিভাবে ভূমিক্ষয় হাত থেকে রক্ষা করতে হয়।
আরো পড়ুন- ডিম সিদ্ধ, ডিম ওমলেট বা ডিম দিয়ে তৈরী যে কোন রেসিপি শরীরের পক্ষে কতটা ভালো ?
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী বাঁধ থেকে এলাকায় বনসৃজনের মাধ্যমে নদী বাঁধের ভূমিক্ষয় প্রত্যয়ে এবার উদ্যোগী হয়েছে গ্রামের বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, রাজ্য সরকার ও বনদপ্তর। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের নিপুণ হাতে তৈরি করা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ চারা। গ্রামের মহিলারা নিজের সংসারের কাজকর্ম সেরে কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে নিজের শিশুর মতন লালন-পালন করে এই ম্যানগোপ চারাগুলিকে।
৩০ থেকে ৪৫ দিন পরে ওই ম্যানগ্রোভ চারাগুলি কে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীমাতৃক এলাকার নদীর চর ও নদী বাঁধের রোপন করে গ্রামের মহিলারা। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার এক মহিলা মনি কর্সি জানান, আমরা যে গেছি কিভাবে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদেরকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। নিজে ধ্বংস হয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে বহু সুন্দরবন গ্রামবাসীদের। এবার সুন্দরবনকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছি আমরা আমরা জানি সুন্দরবন বাজলে বাঁচব আমরা।
আরো পড়ুন- Everyday Protein : শরীরে যত প্রোটিন যাবে,ততই ভাল! আদৌ কি তাই? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
তাই সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে কয়েক ঘণ্টার জন্য এখানে এসে ম্যানগ্রোভ চারা গাছকে লালন পালন করি। আর এই চারা গাছ বড় হয়ে গেলে আমরা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী বাঁধ বনসৃজন এর মধ্যে দিয়ে রোপন করে আসি। ম্যানগ্রোভ ছাড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন মাটির নদী বাঁধ গুলি কে আগলে রাখে। এর ফলে ভূমিক্ষয় এর হাত থেকে রক্ষা পায় নদী বাঁধ। এই বিষয়ে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার বনদপ্তরে আধিকারিক (ডিফও) মিলন মন্ডল জানান, গতবছর সুন্দরবনের বিভিন্ন মহিলাদের নিয়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ নদীর জুড়ে প্রায় 5 কোটি ম্যানগ্রোভ চারা গাছ রোপন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন- বিয়েতে নবদম্পতিকে বোতল-ভর্তি পেট্রল-ডিজেল উপহার দিলেন বন্ধুরা,কেন জানেন ?
এবছর ইতিমধ্যেই প্রায় ১২.৫ কোটি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আগামীতে আরও ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো হবে। ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়ে নদী বাঁধের সবুজ পাঁচিল দেওয়ার কাজ চালানো হচ্ছে। এর ফলে নদী ও সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এর হাত থেকে ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা করবে এই ম্যানগ্রোভ গাছ। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই রাজ্যে প্রবেশ করবে বর্ষা। প্রবল বৃষ্টি সঙ্গে থাকবে ঝড়ো হাওয়ার দাপট এখন নাওয়া খাওয়া ভুলে নিজেদের নদী বাঁধকে আগলে রাখতে মরিয়া সুন্দরবনের মহিলারা।