Breaking Bharart: প্রেম নাকি বলেকয়ে আসে না? প্রেম আসে জীবনে কখনও ঝড়ের মতন হঠাৎ আবার কখনওবা জোয়ার-ভাটার মত নিয়মিত (in a relationship)। আর এই প্রেমকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রেমের সঙ্গে হৃদয়ঘটিত যোগাযোগের কথাই বলেছেন অধিকাংশ। প্রেম আসলে কি তাই? নাকি এটি আদ্যোপান্ত মস্তিষ্ক-নিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক ঘটনা? (a relationship in love)
বিজ্ঞান বলছে, এই প্রেম বা ভালবাসা হল একপ্রকার ককটেল যা নাকি নিউরোপেপটাইড এবং নিউরোট্রান্সমিটারের যৌথ কার্যকলাপ, যা কিনা মানব দেহের নিউরো কোষ থেকে নির্গত একপ্রকার আদি রস, বা উৎসেচক।
এ প্রসঙ্গে নিউরোসায়েন্টিস্ট আর্থার অ্যারন জার্নাল অফ পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোস্যাল সায়েন্সে লিখেছেন, প্রেম বা ভালবাসা কোনও অনুভূতি নয়। বরং এটি একটি মোটিভেশান সিস্টেম। যে সিস্টেমের মাঝে পড়ে আমরা আমাদের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে এগিয়ে চলি। যে প্রয়োজনগুলির অন্যতম হল যোগ্যতম সঙ্গী নির্বাচন, সহবাস এবং প্রজনন (a good partner in a long-relationship)।
আর আমরা যদি আমাদের বিবর্তনের ইতিহাসে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে এই নিউরোপেপটাইড ও নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিকগুলি লক্ষ লক্ষ বছর ধরেই মানবদেহের নিউরোকোষ থেকে ক্ষরিত হচ্ছে। যা আমাদের বংশানুক্রমিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান সাহায্য করছে।
মানুষসহ সকল স্তন্যপায়ীদের সমাজবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে অক্সিটোসিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার। যা তৈরি হয় পেপটাইড বন্ধন দিয়ে। এই পেপটাইড বন্ধন আবার তৈরি হয় অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই অক্সিটোসিন নিউরোট্রান্সমিটারই দুই বা ততোধিক মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। তাই অক্সিটোসিন ‘লাভ হরমোন’ নামেও পরিচিত। (to build a healthy romantic relationship)
আরো পড়ুন- Bathroom on the go : ঘুরে বেড়াতে গিয়ে কখনও বাথরুম পেয়েছে ? কী করা যায় এই ক্ষেত্রে?
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অক্সিটোসিন হরমোনের কারণেই মানুষের মনে প্রেম, কামনা, বাসনা, আবেগ ইত্যাদি ক্রিয়াশীল হয়। সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এই হরমোন। বন্ধন তৈরি করে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গেও। শরীরের মনে ইতিবাচক অনুভূতি আনতেও এর প্রধান ভূমিকা। মানে এক কথায় অক্সিটোসিন হল মানুষকে সুখী রাখার একটি দারুণ মাধ্যম।
অক্সিটোসিন সামাজিক স্বীকৃতিতেও জড়িত। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, অক্সিটোসিন একজন মহিলার প্রতি পুরুষের আকর্ষণ বাড়ায়। একইভাবে, তারা খুঁজে পেয়েছে যে আপনার অংশীদারটির ছবি দেখে অক্সিটোসিন হরমোনকে উত্তেজিত করতে পারে। অন্য কথায়, এই ছোট হরমোনটি মানুষের সম্পর্কের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। আমরা যখন ২০ মিনিটের কম সময়ের জন্য প্রিয়জনকে চুম্বন বা আলিঙ্গন করি, তখন অক্সিটোসিন হরমোন উত্তেজিত হয় এবং দু’জনের মধ্যে বন্ধন বাড়িয়ে তোলে।
আরো পড়ুন- Truck Rhymes: দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি – ট্রাকের পিছনে এসব ছড়া লেখা থাকে কেন?
এমনকী, স্নেহের সামান্য অঙ্গভঙ্গি একটি দম্পতির মধ্যে বন্ধন জোরদার করতে পারে; এর মধ্যে থাকতে পারে হাত ধরে রাখা, মৃদু চুম্বন এবং একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা। যৌন মিলনের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে অক্সিটোসিন এবং ডোপামিন বের হয়। একই সাথে, নিউরাল সিস্টেমগুলি সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালীকরণের সাথে যুক্ত হয়।
সম্পর্কের বয়স যত বাড়ে, সম্পর্ক যত গাঢ় হয়, অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়ে। তাই বলাই যায়, আমাদের সমস্ত অনুভূতি গুলি আসলেই রাসায়নিকের খেলামাত্র।