Breaking Bharat : India : রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের (Russia-Ukraine conflict) জেরে তৈরি হওয়া বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনার প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্ব জুড়েই। ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজারে (stock market) স্পষ্ট হয়েছে যুদ্ধের প্রভাব। এই সংঘাতের ফলে বিশ্বের বেশ কিছু দেশের কারেন্সি ভ্যালুও যথেষ্ট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সের মত দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে যুদ্ধের ফলে লাভবান হবে ইন্দোনেশিয়া। কিভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বখ্যাত ফিনানশিয়াল রিসার্চ সংস্থা নোমুরা তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের (Russia-Ukraine conflict) ফলে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারতে এর সবথেকে বেশি প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, ইকনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সর্বশেষ পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন। অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়া তুলনামূলকভাবে লাভবান হবে। এদিকে, তেল আমদানিকারক হওয়ায় ভারতের জন্যও প্রত্যক্ষভাবে অনেক ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে।কারণ তেলের দাম এখন ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পেতে সমস্ত সীমা পার করে দিচ্ছে।
Tulsi Gowda : খালিপায়ে হেঁটে পৌছেঁ গেলেন রাষ্ট্রপতির কাছে।হাতে তুলে নিলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার
উল্লেখ্য, ভারত বিভিন্ন তেলের মোট চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানি করে। এমতাবস্থায়, আমদানির ক্ষেত্রে ভারতকে ধাক্কা দিতে পারে দামি অপরিশোধিত তেল। এতে বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়বে। কারণ সারা বিশ্বে ক্রুড তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটের জেরে বিশ্বের বাজারও প্রভাবিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ভয়াবহ যুদ্ধের ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে ভারতকে।
ইতিমধ্যেই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রায় ৩ শতাংশ লাফিয়ে ব্যারেল প্রতি ১০৫ ডলারে পৌঁছেছে। গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ক্রুড তেল ও খাদ্যদ্রব্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং পাল্লা দিয়ে জোগানের ঘাটতি এই সমস্যাকে আরও কঠিন করে তুলবে।
আরো পড়ুন- Mohammed Siraj : ক্রিকেট ছেড়ে অটো চালানোর পরামর্শ ! সেই সময়ে পাশে পেয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনিকে
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতে অপরিশোধিত তেলের প্রতি লিটারে ১০ ডলারের দাম বৃদ্ধি ২০২২ সালে ৯.২ শতাংশ বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে ১০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি কমাতে পারে। এই প্রসঙ্গে ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রধান অর্থনীতিবিদ মদন সাবনভিস বলেছেন যে, অপরিশোধিত তেলের ১০ শতাংশের স্থায়ী বৃদ্ধির কারণে WPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ১.২ শতাংশ এবং CPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ০.৩ থেকে ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
যার প্রভাব পড়বে সরাসরি মধ্যবিত্তের হেঁসেলে, তা বলাই বাহুল্য। অর্থাৎ বলা যায় রাশিয়ার যুদ্ধ সংক্রান্ত জেদের কারণে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে।অন্যদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারী রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার কয়েক ঘন্টা পরেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এর ফলে মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচিও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতএব ইউক্রেন সমস্যার জেরে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যত। জোরালো প্রশ্ন উঠে গেল তার নিরাপত্তা নিয়ে। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস-এর তরফে জানানো হল, পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনকে ধরে রাখার ব্যাপারে তারা আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাকাশ স্টেশন যদি হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে পৃথিবীতে, তার কোনও দায় নিতে রাজি নয় রাশিয়া।
আমেরিকার এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকোসমস-এর প্রধান দিমিত্রি রোগজিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং স্পষ্ট ভাষায় হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, আমেরিকা যদি চায় রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ভারত-চীন বা ইউরোপের মাটিতে ফেলে দিতে পারে। যদি তারা সেটা পারে তাহলে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশ স্টেশন দিনে ১৫ থেকে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীকে। সেখানে এখনও রয়েছেন আমেরিকার চার জন ও রাশিয়ার তিন জন মহাকাশচারী। একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্যের মহাকাশ স্টেশনে রাশিয়ার জন্য রয়েছে আলাদা একটি মডিউলও। স্টেশনটিকে কক্ষপথে ধরে রাখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। রয়েছে সর্বাধুনিক প্রোপালশন ব্যবস্থা। রসকসমস-এর ডিরেক্টর জেনারেল দিমিত্রি রোগোজিন তাঁর টুইটে লিখেছেন,
‘ভারতের উপরেও পড়তে পারে। চিনেও। অথবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে এসে হুড়মুড়িয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের উপরেও পড়তে পারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। ইউক্রেন ইস্যুতে আমাদের সঙ্গে যদি অন্য দেশগুলি না সহযোগিতা করে তা হলে পৃথিবীর কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনকে বাঁচাবে কে? আমরাও আর মহাকাশ স্টেশনকে কক্ষপথে ধরে রাখার জন্য কোনও সাহায্য করব না।’
রোগোজিন এও লিখেছেন, সে ক্ষেত্রে ৫০০ টন ওজনের মহাকাশ স্টেশন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্ষচ্যূত হয়ে আমেরিকা বা ইউরোপের উপর এসে পড়তেই পারে। এমনকি, তা পড়তে পারে ভারত বা চিনের উপরেও। ২০২৫ সালেই মহাকাশ স্টেশনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল, তার পরেই মহাকাশ স্টেশনকে ছুড়ে ফেলা হবে প্রশান্ত মহাসাগরে। কিন্তু গত বছরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন কক্ষপথে মহাকাশ স্টেশনের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করেন। রাশিয়া অবশ্য তা মেনে নিতে চায়নি। রাশিয়া তখন জানিয়েছিল মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে থাকতে চায় ২০২৪ পর্যন্ত। তাই মহাকাশ স্টেশনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা যে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।