Breaking Bharat : হিরো সাইকেল (Hero Bicycle)। নয়ের দশকের নস্টালজিয়া। মানুষের চাহিদা বদলেছে ঠিকই, কিন্তু বদলায়নি হিরো সাইকেলের জনপ্রিয়তা। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের নিরিখে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সাইকেল কোম্পানির (most popular bicycle company) উত্থানের কাহিনি হয়তো অনেকেই জানেন না।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই কোম্পানির যাত্রা? নেপথ্যের লড়াই শুনলে অবাক হতে হয়। শুধু ইচ্ছেশক্তিতে ভর করেই চার ভাই মিলে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। আর্থিক অনটনের জন্য একপ্রকার ধার করেই শুরু করা ব্যবসা আজ বিশ্বের দরবারে!
প্রযুক্তির এতটা বাড়বাড়ন্ত তখনও হয়নি। কয়েকবছর পিছিয়ে গেলেও দেখা যাবে সেই ছবি। হিরো সাইকেল নিয়ে নয়ের দশকের ছেলেমেয়েদের মধ্যে নস্টালজিয়া। যদিও বর্তমান সময়ে মোটরবাইক, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে অভিভাবক থেকে ছেলেমেয়েদের মধ্যেও। তাই উপহার হিসেবে ‘নাইন্টিজ নস্টালজিয়া’য় খুব একটা আনন্দ পান না। তবুও জনপ্রিয়তা কমেনি হিরো সাইকেলের। আজও সাইকেলের দুনিয়ায় দাপটের সাথে রয়েছে এই সংস্থা।
কিন্তু কবে থেকে চালু হয়েছিল এই কোম্পানির পথচলা? সূত্রের খবর, আর্থিক অনটন কাটিয়ে এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন চার ভাই: সত্যানন্দ, ওমপ্রকাশ, ব্রজমোহন লাল এবং দয়ানন্দ মুঞ্জাল। তবে হিরো সাইকেলের পথচলা শুরু হয় পাকিস্তান থেকে। পাকিস্তানের কামালিয়া শহরের বাহাদুর চাঁদ মুঞ্জাল এবং ঠাকুর দেবীর চার সন্তান মিলেই শুরু করেছিলেন ব্যবসা।
তবে এই ‘জার্নি’ মোটেই সুখকর ছিল না। প্রায় সবসময়ই অর্থকষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে বাহাদুর চাঁদের পরিবারকে। সংসারের খরচ চালাতে সবজির দোকান চালাতেন তিনি। এভাবেই সুখে-দুঃখে চলছিল সংসার। তবে আচমকাই বাদ সাধল দেশ বিভাজনের ঘটনা। পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসতে হয় পরিবার নিয়ে। বাহাদুর চাঁদ পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় থাকতে শুরু করেন। হঠাৎই দেশভাগের মতো ঘটনার ফলে এদেশে এসে প্রবল অর্থকষ্টে পড়তে হয় তাঁকে।
বাবার পরিস্থিতি দেখে সন্তানেরাও উদয়াস্ত খাটতে শুরু করেন। প্রথমদিকে মুঞ্জাল ভাইয়েরা সাইকেলের বিভিন্ন পার্টসের ব্যবসা শুরু করেন। ক্রমে সেই ব্যবসাকে কীভাবে আরও বড় করা যায়, সেই নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলতে থাকে চার ভাই: সত্যানন্দ, ওমপ্রকাশ, ব্রজমোহন লাল এবং দয়ানন্দ মুঞ্জালের মধ্যে। এরপর একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই ১৯৫৬ সাল নাগাদ ব্যাঙ্ক থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে লুধিয়ানায় সাইকেলের পার্টস বানানোর ইউনিট শুরু করেন তাঁরা।
তখনও হিরো সাইকেল বাজারে আসেনি। তবে ভিতটি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৬ সালেই, বলা বাহুল্য। এরপর প্রায় একদশক কাটে। এই সময়ের মধ্যে দৈনিক ২৫টি সাইকেল তৈরি হতো তাঁদের ইউনিটে। ১৯৬৬ সাল নাগাদ হিরো কোম্পানি বছরে ১ লক্ষ সাইকেল তৈরি করে তা বিক্রি করতে থাকে। শুরু হয় নতুন পথচলা। তারপর আর থেমে থাকেনি। উত্তরোত্তর বেড়ছে জনপ্রিয়তা।
আরো পড়ুন- Unemployed life : টো টো করে ঘুরে বেড়ানো! বেকার জীবন, কোনও কাজ নেই, তাহলে লোকে কি বলবে?
আরো পড়ুন- Watch : আমরা সবসময়ই হাত ঘড়ি পড়ি ! কিন্তু ঘড়ি সাধারণত বাম হাতে পরার চল বেশি।কেন জানেন ?
সূত্রের খবর, আরও দু’দশকে হিরো সাইকেল প্রতি বছর ২২ লক্ষ সাইকেল উৎপাদন করতে থাকে। আটের দশকে সেই রেকর্ড নিজেরাই ভাঙেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চার ভাই। প্রতিদিন প্রায় ১৯ হাজার সাইকেল তৈরি হতে থাকে তাঁদের ইউনিটে। নজিরবিহীন রেকর্ডের জন্য নাম উঠেছে “গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড”-এও। শুধু এদেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও জনপ্রিয়তা বাড়ে হিরো সাইকেলের।
আরো পড়ুন- Barcode or QR : বারকোড কিভাবে বানানো হয় ? বারকোড বা কিউআর কোড স্ক্যান কীভাবে কাজ করে ?
২০১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৭০ টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে হিরো সাইকেল। চলতি শতাব্দির শুরু দিকে ‘Super Brand’-এর মর্যাদা দেয় ব্রিটেন। সারা বিশ্বে এই কোম্পানির ৭৫০০-রও বেশি আউটলেট রয়েছে। কর্মী রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি। বর্তমানে ওমপ্রকাশ মুঞ্জালের ছেলে পঙ্কজ মুঞ্জাল কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। শূন্য থেকে শুরু করা চার ভাইয়ের বিশ্বজয়ের গল্প! যেন চার ‘হিরো’র ‘সাইকেল সফর’।